অনলাইন ডেস্ক :::
গোপন জরিপে একাদশ নির্বাচনে পরিণতি জেনে গিয়ে সরকার বিএনপিকে নির্বাচন থেকে বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
আজ রোববার গুলশানের ইমান্যুয়েল সেন্টারে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এই অভিযোগ করেন তিনি।
খালেদা জিয়া বলেন, সরকার চায় না বিএনপি নির্বাচনে আসুক। বিএনপি নির্বাচনে এলে তাদের যে কী পরিণতি হবে, তারা গোপন খবর নিয়ে জেনে গেছে, তাদের অবস্থান কত নিচে। সেটা তারা বুঝে গেছে। সেজন্যই তারা নানাভাবে হয়রানি করছে যাতে বিএনপি নির্বাচন না আসে, বিএনপির লোকজনকে কিভাবে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যায়। আমি সুস্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, বিএনপিকে বাদ দিয়ে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না। এদেশে নির্বাচন হবে সহায়ক সরকারের অধীনে, হাসিনার অধীনে নয়।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন বাংলাদেশে আর হবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এদেশে নির্বাচন হবেই হবে। তবে সেটা হবে সহায়ক সরকারের অধীনে। সেই নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ গ্রহণ করবে। আমরা চাই, সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হোক।
বৃটেনে সদ্য সমাপ্ত সাধারণ নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা দেখেছেন বৃটেনে নির্বাচন হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে তো ভয় পাননি, তিনি নির্বাচন দিয়েছেন। অথচ তিনি এবার কিছু কম পেয়েছেন সিট। তারপরও তিনি সাহস করে দিয়েছেন। সেইভাবে আজকে আওয়ামী লীগের যদি সামান্যতম সাহস থাকে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিক। কত অপকর্ম তারা ১০ বছরে করেছে এর হিসাব বিএনপি যদি ছেড়েও দেয়, জনগণের কাছে প্রতিটি জিনিসের হিসাব আছে।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে বিএনপি প্রধান বলেন, আমি বলছি, এই কয়েকটা মাস আছে। যত পারেন লুটে নেন- আপনাদের জেনারেল সেক্রেটারি (ওবায়দুল কাদের) যেভাবে বলছেন, যা পারেন লুটে নেন। বিদেশে যান নাহলে আর বেশি সময় পাবেন না। এখন সময় চলে যাওয়ার।
তিনি বলেন, ২০১৮ সাল দেশের জনগণের বছর হবে, গণতন্ত্রের বছর হবে, উন্নয়নের বছর হবে, শান্তির বছর হবে। কী ভাই মুক্তিযোদ্ধারা মনে থাকবে তো। আমরাও আছি।
ক্ষমতাসীন দলের লুটপাট-দুর্নীতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই ১০ বছরে তারা যত লুট করেছে, যত খেয়েছে। তাদের একেক জনের এতো ওজন বেড়েছে যে, গাড়িও তাদের টানতে পারবে কি-না জানি না। এরা জানে নির্বাচন করাতো দূরের কথা, তারা পালাবার সময় তো পাবে না, এরা বেরুতে পারবে না। সেজন্য তারা একতরফা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। নিজে স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সব জায়গায় যাচ্ছেন এবং নৌকা প্রতীকে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপির ইফতার মাহফিলে পর্যন্ত বাঁধা দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার জানে একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কী পরিণতি হতে পারে। সেজন্য বিএনপির জনপ্রিয় নেতাদের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
‘ভিশন ২০৩০’ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ বলে এটা না-কি তাদের থেকে নিয়েছি। এরকম ভিশন তাদের নেই। তাদের আছে চুরির চিন্তা। আমাদের ভিশনের চুরির কোনো কথা নেই। কাজেই তাদের ভিশন আর আমাদের ভিশন এক হতে পারে না, আমাদের চিন্তা ও তাদের চিন্তা এক হতে পারে না।
মুক্তিযোদ্ধাদের সবাইকে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান তিনি।
মূলমঞ্চে এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ইমামুজ্জামান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানসহ প্রবীন মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ইফতার করেন খালেদা জিয়া।
ইফতারে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, রুহুল আলম চৌধুরী, সিনিয়র নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, ফজলুর রহমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, সুজাউদ্দিন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শামা ওবায়েদ, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল জয়নুল আবেদীন, শাহ মো. আবু জাফর, হাসানউদ্দিন সরকার, বাংলাদেশ ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া প্রমূখ।
মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতাদের মধ্যে আবুল হোসেন, মোস্তফা সাহাবুদ্দিন রেজা, মিজানুর রহমান খান, আবদুস সামাদ মোল্লা, আবদুল মান্নান, মালেক খান, আবুল কাশেম, এসএম মোস্তফা কামাল, এইচআর সিদ্দিকী সাজু, কাজী নাসির আহমেদ, আবদুল হাকিম, মোহাম্মদ সাদেক, মতিউর রহমান, কামালউদ্দিন, জোয়াদুর রসুল বাবু, আবদুল মতিন প্রমূখ এই ইফতারে অংশ নেন।
পাঠকের মতামত: